বাংলাদেশের একজন নামকরা পীর সাহেব।
জটিলতা এড়াবার জন্য নামটা বলছি না কিন্তু আশা করছি, বুদ্ধিমান পাঠক সূত্রটা ধরতে পারবেন। তিনি একবার চাঁদ দেখা নিয়ে বড় হুজ্জত করেছিলেন। সমস্ত বাংলাদেশ একদিকে তিনি একদিকে! তার নির্দেশে মধ্যরাতে ইমামদের জনে-জনে ফোন করে একটা রোজায় গন্ডগোল লাগিয়ে দিয়েছিলেন।
ইনি এক মফস্বলে ওয়াজ করতে এসেছেন, সঙ্গে নিয়ে এসেছেন বিরাট কাফেলা- সতেরোজন চেলা, অসংখ্য মুরীদ। যে জায়গায় ওয়াজ হবে এর আশেপাশে ওঁর চেলা, মুরীদরা বাজার জমিয়ে ফেললেন।
হুলস্থূল কান্ড! কেউ পীর সাহেবের দেওয়া তাবিজ (এইডস কোন ছার, পৃথিবীতে এমন কোনো রোগ, সমস্যা আজ অবধি সৃষ্টি হয়নি যা এটায় সারে না) বিক্রয় করছেন। কেউ বা বিক্রয় করছেন বিশেষ হালুয়া। এ হালুয়া খেলে নাকি নর-নারীর বিশেষ মুহূর্তে, নরের ক্ষমতা বহুগুণ বেড়ে যায় (ফাইজার সম্ভবত ভায়েগ্রার ফর্মুলা পীর সাহেবের কাছ থেকে চুরি করেছিল)।
হা-নারী, তার জন্য এ ধরনের কোন হালুয়া নেই! বাংলাদেশে মহিলা পীরের আকাল, এটা অন্যতম কারণ হতে পারে।
দেদারসে বিক্রয় হচ্ছে পীরসাহেব এবং ওঁর বাবার (ইনিও পীর ছিলেন) লেখা বই।
পীর সাহেবের বাবা- ওঁর বইয়ের এক জায়গায় উল্লেখ করেছেন, কিতাবে লিখিয়াছে: "যাহার কোনো পীর নাই তাহার পীর শয়তান"।
কিতাবে লিখিয়াছেন; কে লিখিয়াছেন, কোন কিতাবে লিখিয়াছেন, কেন লিখিয়াছেন এর কোনো বর্ণনা নাই। এটা কি আল কোরআন, না আল হাদিস, সহী হাদিস, না জয়ীফ হাদিস এরও কোন উল্লেখ নেই?
তো, ওয়াজ চলাকালীন সময়ে পীর সাহেব ঘুরে-ফিরে বারবার সুর করে বলতে থাকলেন, "যাহার পীর নাই তাহার পীর শয়তান। বিচারের দিন শয়তানের একেকটা পশম হইবে তালগাছের সমান। পশমের গোড়া দিয়া মোটা মোটা জির (কেঁচো) বাহির হইবে, রে-এ-এ, এ-এ-এ।"
ওয়াজ শেষ হলে পীর সাহেব রাতের বেলা খাবেন। এক ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভূরিভোজনের দায়িত্ব নিলেন। প্রথমে বলা হয়েছিল দুজন খাবেন, পীর সাহেব এবং চেলাদের সর্দার।
ঘণ্টাখানেক পর জানানো হল, না, পীর সাহেবসহ আঠারো জন খাবেন। গৃহকর্তা বিরসমুখে মেনে নিলেন, পীর সাহেব বলে কথা। এত লোকের তো আর ডাইনিংরুমে স্থান সংকুলান হবে না, বড় বারান্দায় ব্যবস্থা হল। আরো দুটা ডাইনিং টেবিল, গোটা ছয়েক চেয়ার ধার করা হল। বাসার সবাই ছুটাছুটি করে হাঁপিয়ে উঠেছে।
একজন চেলা ব্যবস্থা দেখে খবর নিয়ে এলেন, হুজুর চেয়ারে খাইবেন না, চেয়ারে বইসা পা ঝুলায়া খায় খ্রেস্টানরা।
টেবিল চেয়ার সব সরানো হলো। পাটি বিছিয়ে এর উপর খবরের কাগজ বিছানো হল।
হুজুরের আরেক চেলা (ধরা যাক চেলা নম্বর দুই) এবারের ব্যবস্থা দেখে রাগে লাফাতে লাগলেন: হুজুর এইখানে খাইব না, দস্তরখান কই?
চেলা নম্বর তিন গৃহকর্তাকে সদয় বুদ্ধি দিলেন: পাটির উপর চাদর বিছায়া দেন।
গৃহকর্তা কী আর করেন, বিছানার সব চাদর পাটির উপর বিছিয়ে দিলেন।
ভূরি ভোজনের বিরাট আয়োজন করা হল। আঠারোটা মোরগ পরলোকে যাত্রা করল। পোলাউ, কোর্মা, ফিরনি এসব তো আছেই। খাবেন আঠারো জন, ছত্রিশজনের আয়োজন। রান্নাবান্না সব শেষ। চেলা নম্বর চার হঠাৎ খবর নিয়ে এলেন: হুজুর এইসব খাইবেন না, তার জন্যে চাউলের রুটি, কদু ভাজি লাগব।
রাত তখন দশটা। গৃহকর্তা সেরখানেক ঘাম ঝরিয়ে অবশেষে এ অসাধ্য সাধন করলেন।
রাত দেড়টায় ওয়াজ শেষ হল। খাওয়ার সময় দেখা গেল পীর সাহেবের মোরগ-মোসাল্লামের প্রতি বিন্দুমাত্র আগ্রহের কমতি নেই। এ বয়সেও (কত আর হবে ষাট-পয়ষট্টি) খেতে পারেন প্রচুর, ক’দিন পূর্বে ছ’নম্বর ছেলে (ভাবী পীর) এর বিয়ে দিলেন। বাবা পীর হলে ছেলে পীর হবেন এটাই নিয়ম। রাজনীতিবিদদের মত এরাও উওরাধিকার সূত্রে দৈব ক্ষমতাটা পেয়ে যান। কি উপায়ে, এটা সাধারণরা জানে না, বাতেনী তথ্য!
তো, ভুরিভোজন সমাপ্ত হলে চেলাদের সর্দার মস্ত ঢেকুর (অবশ্যই বিকট শব্দে, নইলে ভালো খাওয়া-দাওয়া হয় নাই ভেবে গৃহকর্তা মনঃকষ্ট পেতে পারেন) তুলে বললেন: হুজুর আর খাইব না, দুধ আনেন।
গৃহকর্তার মাথায় হাত। দুধ, দুধ তো নাই! ব্যবস্থা করেননি, আসলে মনেই পড়ে নি। দাঁতে দাঁত চেপে বাচ্চার জন্য তুলে রাখা দুধ এনে দিলেন।
পীর সাহেবের দৈত্য চেলা, ক্ষীণ দৃষ্টির লোকও ইনাকে দেখে দৈত্য ভ্রম করবে। মাশাল্লা, কী উপায়ে এ শরীর বানিয়েছেন কে জানে! অনেকটা চারতলা টিফিন ক্যারিয়ারের মত দেখতে পানের বাটা বের করলেন। কী কারুকাজ, কী জৌলুশ তার! একেকতলায় অসংখ্য খোপ, জর্দাই হবে পনেরো-বিশ প্রকারের। কী বাহারি নাম একেকটার! চ্যামন বাহার, মেশকে আম্বা, শাহজাদী কী আসু। নামগুলো জানা গেল দৈত্য চেলা যখন তরমুজের বিচির মত পান খাওয়া দাঁত বের করে সহযোগীদের জিজ্ঞেস করছিলেন কোন জর্দা দেবেন।
মজার ব্যাপার হল, পীর সাহেব তার ওয়াজে মুখে ফেনা তুলে ফেলেছেন এটা বলে, ইন্ডিয়ার এখন আর কোনো কাজ নাই; একমাত্র কাজ হলো, যেকোনো উপায়ে এদেশের মুসলমানদের ধর্ম নষ্ট করে ফেলা।
পীর সাহেব এবং তার চেলারা যে জর্দা সহযোগে পান চিবুচ্ছেন, আরামে তাদের চোখ ছোট হয়ে আসছে, সেই জর্দা ইন্ডিয়ায় তৈরি। শুধু তাই না, পীরসাহেব পায়ের গিট পর্যন্ত যে লম্বা ঢোলা (এর ভেতর দু-তিনজন বা ওসামা বিন লাদেন অনায়াসে আত্মগোপন করে থাকতে পারবে) চোখ ধাঁধানো যে জিনিসটা পরে আছেন, এটাও গতবার ইন্ডিয়া গিয়ে কিনে নিয়ে এসেছেন।
বারান্দায় যখন খানাপিনা চলছিল তখন সিঁড়ির এক কোণায় মলিন কাপড়ে মোড়া হাড় জিরজিরে একলোক জড়োসড়ো হয়ে বসেছিল। খাবারের মৌ মৌ গন্ধে থেকে থেকে তার ক্ষিধেটা পাক দিচ্ছে। এতোক্ষণ যারা তাকে ভিখারী ভাবছিল তাদের ভুল ভাঙল যখন সলজ্জচিত্তে এ লোক উচ্ছিষ্ট খাবার প্রত্যাখান করল। সে এসেছে পীর সাহেবের দোয়া নিতে।
চেলাদের সর্দার এবার তাকে নিয়ে পড়লেন: পীর সাহেবের তাবিজ নিছো- নেও নাই, বিষয় কি? হালুয়া, হালুয়া কিনছ তো, কি কইলা পয়সা নাই? পীর সাহেবের ওয়ালেদ (বাবা) সাহেবের ২৮ খানা কিতাবের একটাও কিনো নাই! মিঞা তুমি ফকির নিহি। যা গিয়া পীর সাহেবের পা টিইপ্যা দে।
*ছবি ১:
"যাহার পীর নাই সে শয়তান"।
আচ্ছা, শয়তান দেখতে কেমন হয়? শয়তানের একটা ছবির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু শয়তানের ছবি পাই কই? শয়তান দেখতে কেমন হয়, এটাই তো জানি না ছাই! জানি না যখন তখন কাকতাড়ুয়ার মত হতে দোষ কী!
**ছবি ২:
পোস্টের সঙ্গে এর কোন সম্পর্ক নাই, ছবিটা প্রতীক অর্থে-প্রতীকাবাদ। বুড়া-বুড়া মানুষদেরও দেখেছি পীরের ছেলেদের পা ধরে কদমবুসি করতে। পীরের ছেলে-ছোকরাদের ছবি পাই কই? তাই...।
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Monday, November 2, 2009
যাহার কোন পীর নাই তাহার পীর শয়তান
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
1 comment:
হে হে হে। এইরাম জলজ্যান্ত পীর দেখার পর কেউ যদি বলে, "শয়তান মিথ; শয়তানের অস্তিত্ব নাই" - সে আসলে রাম বোকা! :D
Post a Comment