*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Saturday, April 18, 2009
মুক্তিযুদ্ধে, একজন ঠেলাওয়ালা!
কমান্ডো মো: খলিলুর রহমান, তাঁর মুক্তিযুদ্ধ, নাবিক ও নৌকমান্ডোদের জীবন গাঁথা বইয়ের ২৪০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন:
"ফজলুল হক ভূঁইয়া, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের মৃত্যুঞ্জয়ী বীর।
পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে এদেশ থেকে বিতাড়িত করার জন্য জীবন উৎসর্গ করার শপথ নিয়ে ১৯৭১ সালের ১৩ মে মুর্শিদাবাদ জেলার আম্রকাননে 'সুইসাইডাল স্কোয়াডে' নাম লিখিয়েছিলেন।
৩ মাস ঝুকিপূর্ণ ট্রেনিং নিয়ে নিজেকে একজন চৌকশ নৌকমান্ডো হিসাবে প্রস্তুত করতে সমর্থ হন।
এর আগে ২৫ মার্চ পাকিস্তানের হানাদার বাহিনীর আগ্রাসন প্রতিহত করার জন্য ২৭ মার্চ সকালে আখাউড়া ইপিআর ক্যাম্প শক্রমুক্ত করেন।
এরপর তিনি চুনারুঘাট যুদ্ধ, বাল্লা যুদ্ধে অংশ নেন। দুটি যুদ্ধ ছিল ভয়াবহ এবং কয়েকদিন ব্যাপি বিরামহীন ভাবে চলে।
অত:পর মেজর শফিউল্লা (পরবর্তীতে সেনাপ্রধান) তাঁকে নৌকমান্ডো প্রশিক্ষণের জন্য পলাশী পাঠিয়ে দেন।
(ভয়ংকর কঠিন) প্রশিক্ষণ শেষে তিনি নারায়নগঞ্জ নদী বন্দর অপারেশন এবং জামালপুর ফেরীঘাট অভিযানে অংশ নেন।
ভারতে প্রত্যাবর্তনের পর মিত্রবাহিনীর সাথে হোসেনপুরে একটি বড় ব্রীজ ধ্বংস করেন।"
(লেখাটি সংক্ষেপিত আকারে উল্লেখ করলাম)
নৌ-কমান্ডো ফজলুল হককে নিয়ে লেখাটা পড়ে আমি চমকে উঠি। এই মানুষটা তো আমার এলাকার। খোঁজ করতে গিয়ে দেখলাম, মানুষটা সম্বন্ধে তেমন কেউ বিশেষ কিছু জানে না। এলাকায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যারা বছরের পর বছর ধরে বাতচিত করেন, তাঁদের মধ্যে এই মানুষটাকে কখনও দেখা যায়নি। মানুষটা কোন দল করেন না এবং প্রায় নিরক্ষর এটাই কী কারণ?
ভাগ্যক্রমে মানুষটাকে পেয়ে যাই। না পেলেই সম্ভবত ভাল হত। মানুষটা ঠেলাগাড়ি চালান- আমি থরথর করে কাঁপতে থাকি! অন্তত আমাকে এই বাড়তি কষ্টটা পেতে হত না। কখনও নিজেকে আমার এমন অসহায় কাতর মনে হয়নি। যে বাড়িটার সামনে আমি দাঁড়িয়ে আছি এটাকে কী আদৌ বাড়ি নামের কিছু বলা যায়? জানি না, জানি না আমি। এই ছাপড়ার একটা ঘরে গাদাগাদি করে থাকে এতগুলো মানুষ! এ দেশের সেরা(!) সন্তান। যাদের জন্য আমি মুক্ত শ্বাস নিচ্ছি? হা ঈশ্বর...!
আমার মাথায় কেবল ফাদার মারিনো রিগনের কথাটা ঘুরপাক খাচ্ছিল, "যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন তাঁরাই জয়ী। আমরা যারা বেঁচে আছি তারা স্বাধীনতার সুখ বা সুবিধাভোগী।"
ফজলুল হক নামের মানুষটা আমাকে দেখে বিব্রত হচ্ছিলেন, বসার কোন জায়গা দিতে পারছিলেন না বলে। তিনি বারবার বলছিলেন, অন্য কোথাও বসে কথা বলি? আমি ভয়ে ভয়ে বলি, আপনি কী আমার বাসায় কষ্ট করে যাবেন, আমরা একসঙ্গে চা খাব। মানুষটা সানন্দে রাজি হয়ে যান।
আমরা চুকচুক করে চা খাই আর কথা বলি।
মানুষটা আমাকে বলেন, 'পুরনো দিনের কথা বইলা কী লাভ? আমার তো কারও প্রতি কোন দাবী নাই'।
আমি আমার আস্তিনে লুকানো ব্রক্ষ্মাস্ত্র ছুঁড়ে দেই। বলি, এই দেশে এখনো কিছু লোক আছে যারা আপনাদেরকে ভুলেনি। উদাহরণ দিয়ে বলি, অনেক আগে এখানে চাকরি করতেন, ডা: রুমিকে চেনেন না? তিনি এখন মস্ত বড় ডাক্তার। এই মানুষটা কখনও চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় ট্রেনে আসলে; গঙ্গাসাগরের কাছে এসে সীট ছেড়ে দাঁড়িয়ে যেতেন। ততক্ষণ পর্যন্ত বসতেন না যতক্ষণ পর্যন্ত না ট্রেনটা বীরশ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামালের সমাধিস্থল ত্যাগ না করে।
মানুষটা কাঁদেন। আমি তাকে কাঁদতে দেই। কী হাহাকার করা একটা দৃশ্য! এই অগ্নিপুরুষের এমন কষ্টের ছবি উঠাতে মন সায় দেয় না। কিন্তু আমরা জাতি হিসাবে কতটা সভ্য এর নমুনা থাকাটা বড্ড জরুরি।
মানুষটা খানিকটা সুস্থির হয়ে বলেন, 'এই দেখেন, আমার শইলের রোম দাড়ায়া গেছে'।
আমি অবিশ্বাস করার জন্য না, মানুষটাকে ছোবার লোভে তাঁর হাতে হাত রাখি।
এরপর মানুষটা থেমে থেমে বলতে থাকেন আমাদের অজানাসব কথা! তাঁদের দুর্ধর্ষ ট্রেনিং-এর কথা। নাম লিখিয়েছিলেন, সুইসাইডাল স্কোয়াডে। সই করতে হয়েছে, "...যুদ্ধে আমার মৃত্যু ঘটলে কেউ দায়ী থাকবে না" এই কাগজে।
ভারতের কমান্ডার জি, এম, মার্টিস কেমন করে তাঁদের ট্রেনিং দিয়েছেন। প্রত্যেককে ১টা করে কাফনের কাপড়ও দেয়া হয়েছিল। অ্যামবুশ বা কোন কারণে সহযোদ্ধার মৃত্যু হলে যেন কাফনের কাপড় মুড়িয়ে কবরস্থ করা হয়। সেই রেডিও থেকে প্রচারিত সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের "আমার পুতুল আজকে প্রথম যাবে শ্বশুরবাড়ী"। ব্যস, পেটে লীমপেট মাইন গামছা দিয়ে বুকে বেঁধে পানিয়ে ঝাপিয়ে দৈত্যাকারসব পাকিস্তানিদের অস্ত্র-খাবার ভর্তি পানির জাহাজগুলো উড়িয়ে দেয়া। অপরারেশন জ্যাকপটের মাধ্যমে এক নিমিষেই গোটা বিশ্ব জেনে গিয়েছিল, ভয়াবহ এক ঘটনা ঘটে গেছে!
গা হিম করা সব কথা বলে যাচ্ছিলেন। তার চোখ দিয়ে আমি দেখছিলাম, অপারেশন জ্যাকপট-এর সেই সিনেমাকে হার মানানো দুর্ধর্ষসব বীরত্ব!
আমি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যতটুকু পড়েছি, কোথাও কাফনের কাপড়ের প্রসঙ্গ শুনিনি। আজ জানলাম। আরও জানলাম, মানুষটা জিয়াকে কেমন নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছেন! এখন মানুষটার স্বরূপ আমূল বদলে গেছে- সেই দাপিয়ে বেড়ানো কমান্ডো। 'পাপা-মামা ডোন্ট ক্রাই, কামান্ডো সোলজার নেভার ডাই'!
মানুষটা বলতে থাকেন, 'যুদ্ধ যখন শেষ হইল, আখাউড়া আসলাম। তখন সবাই অস্ত্র জমা দিতেছে। আমার অস্ত্র কেউ জমা নেয় না। আমার অস্ত্র তো বন্দুক-রাইফেল না, লিমপেট মাইন। আমারে কুমিল্লা পাঠান হইল। সেক্টর কমান্ডার জিয়ার কাছে। জিয়া বললেন, এইটা কী! আমি বললাম, আপনে একজন সেক্টর কমান্ডার, লিমপেট মাইন চেনেন না!
জিয়া বললেন, না, আমি বুঝতেছি না, আমি ল্যান্ড-ফোর্সের লোক। এরপর একবার এইখানে, আরেকবার ওইখানে পাঠায়...'।
মানুষটা হা হা করে হাসতে থাকেন।
আমি চাতকের মত দেখি মানুষটার হাসি, ঝকঝকে চোখ!
মানুষটার কাজে বেরুবার তাড়া। আরেকদিন আমরা বসব এই প্রতিশ্রুতি আদায় করে মানুষটাকে বিদায় দেই।
এই দেশের সেরা সন্তানদের ( মনে পড়ে যায়, দুলা মিয়ার কথা) কাছে মুক্তিযুদ্ধ মানে পদে পদে অসম্মানিত হওয়া। আর ধান্দাবাজদের ধান্দাবাজীর সুযোগ করে দেয়া। গ্রামীন ফোন, প্রথম আলোর চোখের পানিতে দেশে বন্যা হয়ে যাওয়ার দশা। এদের ভাবগতিক দেখে মনে হচ্ছে, এরা মুক্তিযোদ্ধাদের চিঠির মালিক বনে গেছে। আমার খুব জানতে ইচ্ছা করে, এই 'একাত্তরের চিঠি' বই বিক্রিলদ্ধ টাকা কী চিঠির মালিকরা পাবেন?
*এই পোস্ট আমি উম্মুক্ত রাখব। যখনই তাঁর সঙ্গে দেখা হবে, কথা হবে, তখনই যোগ করব। পরবর্তি লেখা...।
**রাসেল পারভেজ, এই মানুষটাকে নিয়ে 'আমার ব্লগ' সাইটে লিখেছেন। বৃহত্তর পাঠকগোষ্ঠীর কাছে তুলে ধরার জন্য কৃতজ্ঞা প্রকাশ করি। লেখাটার লিংক
***ইত্তেফাকের ভৌতিক সাক্ষাৎকার!: http://www.ali-mahmed.com/2011/03/blog-post_26.html
****সম্প্রতি ফজলুল হক ভূঁইয়াকে নিয়ে ডয়চে ভেলে থেকে সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। তাঁর এই সাক্ষাৎকারের রেডিও লিংক পাওয়া যাবে এখানে:
বিভাগ
১৯৭১: প্রসব বেদনা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
3 comments:
নিজেকে পোকা-মাকড় মনে হচ্ছে...
রাসেল পারভেজ- এর লিখার লিঙ্কটা কাজ করছে না।
এটা সম্ভবত তিনি যে সাইটটিতে লিখেছিলেন তাদের সমস্যা...@Ripon Majumder
Post a Comment