Search

Wednesday, February 27, 2008

রাহেলা: একটা বিস্ময়, একটা চাবুকের নাম!

কিছু অদেখা ক্ষত আছে যা দৃশ্যমান না বলে বাঁচোয়া! কিন্তু এড়াবার উপায় কী? রাহেলার চট করে মরে যাওয়ার কথা ছিল কিন্তু এই মানুষটা দিনের পর দিন বেঁচে ছিলেন সম্ভবত আমাদেরকে চাবকাবার জন্য। চাবুকের ক্ষত শুকিয়ে যাচ্ছিল ...!

আমাদের দেশে অসম্ভব শক্তিশালী মানুষের মেয়ে শাজনীন হত্যা মামলা ঝুলে থাকে বছরের পর বছর। হতদরিদ্র রাহেলার মামলার গতি কী হবে তা সহজেই অনুমেয়! আইনের হাত খুব লম্বা শুনতে ভালই লাগে কিন্তু আইনের পা পেছনে এও সত্য। সম্প্রতী নিজস্ব কাজে কোর্টের কিছু কাজ-কারবার দেখার সুযোগ হয়েছে আমার। বিস্তারিত না বলে অল্পই বলি, আইনর লোকদের আইনের প্রতি কতটা শ্রদ্ধা বলা মুশকিল। সুপ্রীম কোর্টের বারে দেখেছি আইনজীবীরা ধুমসে সিগারেট টানেন, এতে কোন বিকার আছে বলে মনে হয়নি। জাজ সাহেব রায় দিয়েছেন কিন্তু সপ্তাহের পর সপ্তাহ সই করেননি। এই রায়ের আদৌ মূল্য কী?

২০০৪-এ রাহেলার বিষয়টা যখন জেনেছিলাম, তখন আমি হতবাক হয়ে ভাবছিলাম, ওই মানুষটার বাঁচার কী তীব্র আকুতি: ‘আমি মরি নাই, আমারে বাঁচান’! কেমন করে সম্ভব একজন মানুষের পক্ষে এই অল্প কটা শব্দ উচ্চারণ করা? যে মানুষটার শরীরে পচন ধরেছে। স্পাইনাল কর্ড এবং দু-পায়ের রগ কাটা, শুধু কন্ঠনালীর মাধ্যমে শরীরের সঙ্গে মাথা ঝুলে আছে। শরীরের ক্ষতঅংশে অজস্র পিপড়া বাসা বেধেছে এবং কাটা অংশ থেকে রক্ত পড়তে পড়তে পুরো শরীর ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। মানুষটাকে এ গ্রহের চরম শারীরীক নির্যাতন করে নর নামের যে নরপশুরা তাকে জঙ্গলাকীর্ণ নির্জন স্থানে এই অবস্থায় ফেলে গিয়েছিল, দু-দিন পর তার আবার ফিরে আসে এবং জীবিত দেখে ক্ষতস্থানে এসিড ঢেলে দিয়েছিল।

রাহেলা, হতভাগা এই মানুষটা রোদ-বৃষ্টির মধ্যে ৩দিন এই অবস্থায় টিকে ছিলেন। হায় রে জীবন, এই নষ্ট গ্রহে বেঁচে থাকার কী আপ্রাণ চেষ্টা! পরে তাঁকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন তিনি স্পষ্ট করে বলেছিলেন, দুর্বৃত্ত লিটন, দেলোয়ারের নাম। টানা ২৩দিন মৃত্যুকে তুড়ি মেরে একসময় হাল ছেড়ে দেন, আরেকটা কুৎসিত ভোরের অপেক্ষা না করে মারার যান। এসবই পুরনো তথ্য, অনেকেরই জানা।

রাহেলার মা তাঁর কষ্ট শেয়ার করেছিলেন এভাবে: ‘তারা চিকিৎসার খরচ চালাতে পারছেন না। সরকারী হাসপাতাল হলেও ওষুধ কিনতে হয় বাইরে থেকে’। রাহেলার স্বামী হাসান মিয়া (সূত্র: প্রথম আলো), চাঁন মিয়া (সূত্র: ফয়সল নোই। আমার ধারণা এই তথ্যটাই সঠিক)।

তো রাহেলার স্বামী জানিয়েছিলেন: ‘অর্থাভাবে চিকিৎসার খরচ যোগাতে পারছি না’। আহ-হা, আমাদের দেশের মানব দরদীরা তখন কোথায় ছিলেন! বিভিন্ন নারী সংগঠন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডে বিক্ষোভ মিছিল করেছিলেন। বেশ যা হোক।

আজ ভাবি, আমিই বা কোথায় ছিলাম? আরে, আমার তখন সময় কোথায়! বইমেলা সামনে, চেষ্টা করিয়া যদি একটাখানা কিতাব বাহির করা যায়, ছাতাফাতা লেখা নিয়ে ভারী ব্যস্ত। বিষয়টা এখানেই শেষ হলে বেশ হতো। কিন্তু...।

একজন খুব ঝামেলা করছিল, আমাকে গরু খোঁজা খুঁজছিল। প্রচলিত ভাবনায় মানুষটা তেলিবেলি টাইপের। যে মানুষটা আমাকে কালঘাম ঝরিয়ে খুঁজছিল সচরাচর এইসব মানুষদের কাছ থেকে আমার মত মানুষ যথেষ্ট গা বাঁচিয়ে চলি, দু-চার পাতা বেশি শিখে ফেলেছি যে! মানুষটাকে দেখতাম ফুটপাতে বসে ছাতা, তালা সারাই করতে। কিন্তু একটা বিষয় আমাকে অবাক করত, তিনি পাশের দোকান থেকে পত্রিকা নিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়তেন অথচ আমি পত্রিকায় কখনও কখনও চোখ বুলিয়ে সারা।
তিনি আমার কাছে এসেছেন ওই দিনের পত্রিকা পড়ে, রাহেলার চিকিৎসার অর্থ সংকট, তাই কিছু টাকা দিতে চান। পালা কেটে (গ্রাম্য ব্যাংক, বাঁশের মধ্যে টাকা জমানো হয়) টাকা নিয়ে এসেছেন। কিভাবে টাকা পাঠানো যেতে পারে এই পরামর্শ করতে। টাকার অংকটাও কম না, প্রায় ৪০০০ টাকার মত।


পাগল, আমার সময় কই,কাজ-অকাজে বেলা বয়ে যায় যে! বললেই ঢাকা যাওয়া যায় নাকি? নাছোড়বান্দা মানুষটা আর নিরুপায় আমি, টাকাটা না নিয়ে আমার উপায় কী! আমার এক বন্ধুকে ফোন করে বললাম, সমপরিমাণ টাকা রাহেলার মার হাতে পৌঁছে দিতে। সাপ্তাহিক ছুটিতে বাড়িতে আসলে দিয়ে দেয়া হবে। তার মুখেই শোনা, রাহেলার মা টাকাটা পেয়ে নাকি খুব কেঁদেছিলেন! বারবার জানতে চাইছিলেন প্রেরকের নাম। কিন্তু মানুষটার নাম প্রকাশে যে বড় অনীহা, তা বেশ! কিন্তু ওই মানুষটা আমাকে যে জুতা মেরেছিলেন, জুতায় আবর্জনা লাগিয়ে, এই কষ্টটা কাকে বলি!

*ছবি সূত্র: ইন্টারনেট

Thursday, February 14, 2008

ভালবাসা দিবসে:

তবুও এই কুতুয়া গ্রহটাকে ভালবাসি...।