শাসক সাহেব নিরিবিলিতে অবসর জীবন কাটাবেন বলে একটা রাজবাড়ী কিনলেন। অবশ্য এটাকে রাজবাড়ী না বলে পোড়োবাড়ী বললেই ভালো হয়। আধমাইলের ভেতর জনমানব নেই।
বাড়িটা কিনেছেন পানির দামে। বাজারে গুজব, এ বাড়ির মালিকদের নাকি অপঘাতে মৃত্যু হয়, বদরাগী একটা ভূত নাকি থাকে এ বাড়িতে।
শাসক সাহেব ছুঁচালো গোঁফের ডগা (মোম দিয়ে প্রচুর সময় নিয়ে পাকানো) দুমড়ে মুচড়ে মুচকি হেসেছিলেন, ব্যাটারা ভাড় কোথাকার। ভূতের ভয় দেখায় তাকে, রিটায়ার্ড এস.পি এম. এইচ. শাসককে, যার ভয়ে একঘাটে শেয়াল মুরগি পানি খেয়েছে।
গভীর রাতে শাসক সাহেবের ঘুম ভেঙে গেল, অকারণেই কেমন যেন গা ছমছম করছে। চোখ পুরোপুরি খুলে খাটের পাশে যে অবয়বটাকে দেখলেন এক কথায় একে বলা চলে, কত্সিত-অশুভ। ভয় গোপন করে হুংকার দিলেন, এ্যাই, কে-কে, কে তুমি।
আমি ভূত, অবয়বটা বিকট হেসে বলল, নড়াচড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়গুলো থেকে মটমট শব্দ হচ্ছে।
মামদোবাজীর জায়গা পাও না- তুমি ভূত, প্রমাণ কি? আই.ডি মানে পরিচয়পত্র আছে?
ভূতটা এতো অবাক হলো তার লাল চোখটা নীল হয়ে গেল, তোতলাতে তোতলাতে বলল, আমি ভূ-ভূত, আমার আ-আবার-আইডি!
ইয়েস, চোয়াল শক্ত করে বললেন আজাদ সাহেব। ভূত হও আর টূত হও পার পাবে না, আই.ডি না দেখালে বাপকেও ছাড়ি না। সাংবাদিকরা আই.ডি দেখিয়েও আমার কাছ থেকে ছাড় পায়নি, পিটিয়ে শুইয়ে দিয়েছি।
ভূতটা মাথা নিচু করে মাথা চুলকাতে চুলকাতে কি যেন ভাবল। দূরে পড়ে থাকা একটা লোহার ডান্ডা তুলে কচকচ করে চিবিয়ে মস্তো ঢেকুর তুলে বলল, কি, এইবার বিশ্বাস হয়?
এবার শাসক সাহেব ভয় পেলেন, হাত-পা পেটে ঢুকে যাওয়ার দশা। ক্ষীণ গলায় কোনোমতে বললেন, হয়।
হয়, না, ভালো-ভালো, ভূতটা বলল পোড়ো বাড়িটাকে নাড়িয়ে দিয়ে, হুই, এইবার তোর মুণ্ডুটা ছিঁড়ে ফেলব।
শাসক সাহেব স্তম্ভিত। ভূতটা তাকে তুই তুই করে বলছে, একজন রিটায়ার্ড এস.পি-কে! মাথায় কেমন ভোঁতা যন্ত্রণা, হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের মতো মনে পড়ল। এই তো সেদিন টিভি নাটকে দেখছিলেন কিভাবে চট করে একজনকে সম্মোহিত করে ফেলা যায়। কি সর্বনাশ, দেখতে দেখতে তিনি নিজেও সম্মোহিত হয়ে পড়েছিলেন। আচ্ছা, এ নিয়ম কি ভূতদের বেলায়ও খাটে, চেষ্টা করে দেখতে দোষ কি। ঠাণ্ডা শ্বাস ছেড়ে ভাবলেন, হারাবার তো আর কিছু নেই, তুই করে তো বলেই ফেলেছে।
তিনি উঁচু গলায় বললেন, আমি ঊনিশ থেকে নয় পর্যন্ত গুণব, সম্মোহিত হয়ে আমি যা বলব তুমি তাই করবে।
ভূত গা জ্বালানো হাসি হেসে বলল, হয়-হয়, মরার আগে ব্রেন আউট হয়।
শাসক সাহেব একাগ্রচিত্তে গুণে চলেছেন, উনিশ... সতের... পনের... এগার... নয়।
ডিং। ভূতটার হাড়ের মটমট শব্দ মিলিয়ে গেল, ফার্নিচারের মতো দাঁড়িয়ে রইল। শাসক সাহেব বিস্ময় চেপে ঠাণ্ডা গলায় বললেন, এবার ডান হাত দিয়ে ডান কান ধরো, ধরেছো, গুড। মোচড় দাও, উহু, আরও জোরে, দিয়েছ, ভেরী গুড। এবার কানটা ছিঁড়ে ফেল। যাও, এখন থেকে ভ্যানগগের মতো এক কান নিয়ে ঘুরে বেড়াও।
ভূত ছেঁড়া কান নিয়ে কাঁদ-কাঁদ গলায় বলল, ভ্যানগগ তো মাফলার দিয়ে কান ঢেকে রাখত, এই গরমে মাফলার পাই কই।
তুমি তাহলে জানো ভ্যানগগ সম্বন্ধে, আজাদ সাহেবের বিস্ময়ের শেষ নেই।
হাহ, ভূত বলল হেলাফেলাভাবে। এটা কোনো ব্যাপারই না। আমি হলাম গিয়ে প্রাচীন ভূত। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকেই আছি, কোন ব্যাপারটা জানি না? বুঝলেন, আমার মনটা ওদিন খুব বিষণ্ন ছিল, অনেকগুলো লুডিওমিল ট্যাবলেট খেয়েও কাজ হল না। মানুষের খুলিতে হুইস্কি পান করতে করতে ভাবলাম, জীবনটা আসলে খুব নিরামিষ হয়ে যাচ্ছে। তো, আমি একটা মন্ত্র পড়লাম: মানুষ আমার পুত, মেয়ে মানুষ আমার ঝি- বুকে আছে আমেরিকার নাম, করবি আমার কি। ভ্যানগগের মাথায় পাগলামিটা তো আমিই ঢুকিয়েছিলাম। আহ্, এরপর কি মজাটাই না হয়েছিল!
এবার ভূতটা সামনে পেছনে হেলেদুলে হা হা করে হাসতে লাগল, হাড়ে ঘষা খেয়ে বিকট মট মট শব্দ হচ্ছে। শাসক সাহেব শঙ্কিত হলেন, বাড়িটার যে অবস্থা যেভাবে হাসছে ফেলে না দেয়। ধমক দিলেন, ফ্যা ফ্যা করে হেসো না তো। আর মট মট শব্দ শুনে মনে হচ্ছে ইউনিভার্সিটিতে গোলাগুলি হচ্ছে। জয়েন্টগুলোতে গ্রীজ লাগাও গিয়ে, গ্রীজ না পেলে মঘা দাওয়াখানার হালুয়া লাগিয়ে দেখতে পারো।
ভূতটার অসম্ভব রাগ হলো, তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে ভাবল, আঃ, এই লোকটার খুলিতে করে চা খেলে কি মজাই না হবে।
শাসক সাহেব কি করে জানি টের পেয়ে গেলেন, বিড়বিড় করে বললেন, ঊনিশ...নয়?
ডিং। ভূতটার এবার ভাবলেশহীন চোখ, নিস্তেজ গলা, মাফ করে দেন, জনাব।
আচ্ছা যাও মাফ করে দিলাম। তা দৈত্য-টৈত্যদের শুনেছি অনেক ধরনের ক্ষমতা-টমতা থাকে, তোমার কি আছে নাকি এরকম কিছু?
জ্বী জনাব, আছে, আপনি কি চান?
শুনেছি টেলিভিশনের মতো শক্তিশালী মাধ্যম নাকি এদেশে আর নাই। এই যাদুর বাক্সে যা দেখানো হয় পাবলিক তাই বিশ্বাস করে। আমি চাই সংবাদে, বিশেষ করে আটটা-দশটার সংবাদে গুরুত্বের সঙ্গে আমাকে দেখানো হোক। জনগণের জন্যে আমি যে সোনার দেহ মাটি করে ফেলছি, এসব তুলে ধরা হোক। বিশেষ করে প্রথম পনেরো মিনিট আমার জন্য বরাদ্দ রাখবে।
কি করবেন আপনি, যেটা দেখানো হবে, ভূত আগ্রহের সঙ্গে জানতে চাইল।
এই ধরো গাছ-টাছ লাগালাম, ফিতা কাটলাম- এইসব আর কি।
তথাস্তু,ভূত অদৃশ্য হয়ে গেল।
পরদিন, আরাম কেদারায় গা এলিয়ে শাসক সাহেব গভীর আগ্রহে সংবাদ দেখছেন- কী চমৎকারই না দেখা যাচ্ছে তাকে।
তার পেছনে ভূতটা দাঁড়িয়ে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসল, একমাত্র সেই জানে, এই মুহূর্তে এই দেশে এরা দুজনই মাত্র সংবাদের এ অংশ দেখছে। বিচিত্র কারণে বাংলাদেশের দর্শকরা আটটার সংবাদ শুরু হওয়ার পনেরো মিনিট পর টিভি অন করে।
*Das ist meine Welt. Wenn es auch Ihnen gehört, habe ich kein Problem mit Ihnen. Es gibt keinen Grund mit Ihnen zu kämpfen. Weil wir sind Freunde, Verwandte. * この地球は私のものです。たまたまこの地球はあなたのものでもあれば、私はあなたと争わない。あなたは私の兄弟、親族ですから。 * This planet belongs to me. By any chance, if you also claim the ownership of this planet, I have no complain, even I should not have any complain about that. Because you are my brother-relative.
Monday, July 28, 2008
বিটিভি'র আটটার সংবাদ...
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment