Search

Monday, July 14, 2008

মিশন পসিবল

আমাদের দেশে ফি বছর বন্যা হওয়াটা বড় জরুরী। নইলে আমরা যে কী মানবদরদী এটা প্রমাণ হবে কেমন করে! বন্যা হয় বলেই না এটা আমরা হাতেনাতে দেখিয়ে দিতে পারি একেকজন কেমন হাজী মহসীন! হেলিকপ্টারে করে কয়েক বসত্মা ত্রাণ না দিলে মানবতা যে আমাদের পগারপার হয়! এটা আমরা শিখেছি আমাদের মহান নেতাদের কাছ থেকে। ত্রাণের বিস্কুট খায় নেতাদের পোষা ঘোড়া। আর ত্রাণের টিন এদের পশ্চাদদেশ ব্যতীত কোথায় লাগানো হয়নি?

রাজনীতিবিদদের স্টাইলই আলাদা। এই দেখুন না, যমুনা ব্রীজের জন্য বছরের পর বছর ধরে কোটি কোটি টাকা ‘যমুনা সেতু সারচার্জ’ দিলাম আমরা আহাম্মক পাবলিকরা, আর অন্যত্র মারামারি হলো এটা কার সেতু এটা নিয়ে! প্রত্যেকেই ডুয়েল লড়লেন, এঁদের দাবী এরাই নাকি এই সেতু করেছেন। সবই আমরা জানলাম, কেবল জানা হলো না, এঁরা এঁদের কোন তালুকটা বিক্রি করে করে ক-টাকা অমুক্ত হস্তে দিয়েছেন, এটা।

তো, বন্যা এলেই শুরু হয় মানব দরদীদের ত্রাণ কর্মকান্ড। কী সব একেকটা ফটোসেশন! আজকালকার ক্যামেরা, মুন্ডুটা ঘুরিয়ে ক্যামেরার দিকে না এনে তাকালে মুন্ডুর রেহাই নেই, ক্যামেরারও!
আজকাল পত্রিকাওয়ালারাও বছর ধরে ত্রাণ বিতরণ করে আসছেন। মহতী উদ্যেগ সন্দেহ নেই। যারা টাকা দান করছেন তাদের নাম ছাপানো হয়, বেশ। কিন্তু পত্রিকাওয়ালারা বিস্মৃত হন এখানে এদের ভূমিকা কেবল সমন্বয়কারীর। নিজেদের পত্রিকায় নিজেদের ঢোল এমন বাজিয়ে ফেলে, অন্য কেউ ঢোল ফাটিয়ে ফেলার আগেই। নিয়ম করে, ফলাও করে, ওই পত্রিকার গুণগান। ‘... মুইরে বাচাই দিলে’- ‘আফনেরা ইতান দিয়া পুতের কাম করছুইন’। ‘পোত্তম আলো থ্যাকি পোত্তম ইলিপ পাইনো’।
কীসব টাচী বাতচিত- ফাও কী সব দুর্ধর্ষ ছবি! কই ত্রাণ, কই মাথা! ওই যে বললাম, ফটোসেশন! আমার বোধগম্য হয় না, ত্রাণ দিতে গেলে ফটোসেশন করার প্রয়োজনটা কোথায়?

দেখাবার অভিলাষ। এটা সম্ভবত আমরা শিখেছি এ দেশের তথাকথিত ধর্মভীরুদের কাছ থেকে। ক্রমশ বাড়ছে এদের পাঞ্জাবীর ঝুল, দাড়ির চুল, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তসবীর দানা। বাজারে হাঁটতে হাঁটতে তসবীহ টিপছেন, বা মুখে থুথু ভরিয়ে মিসওয়াক নামে দাঁত খুলে ফেলার চেষ্টা করছেন। উনি যে কত আল্লাওয়ালা লোক এটা আমাদেরকে না বোঝানো পযন্ত কারো নিস্কৃতি নেই! ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন ধর্ম উদ্ধার করতে। ৩ মাসের চিল্লায় বেরিয়ে পড়বেন, কিন্তু ৩ দিনের জন্য বলে দেখুন না, ত্রাণ নিয়ে বেরিয়ে পড়তে। দেখুন, ক-জনকে পাওয়া যায়!

শত শত মানুষ মারা যাচ্ছে, এই হার ক্রমশ বাড়ছেই! ক-জন মিলে একটা নৌকা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন। আসলে এইভাবে বিচ্ছিন্ন করে প্রকৃতির বিরুদ্ধে লড়াই চালানো যায় না। প্রকৃতির সন্তানরা লড়বে প্রকৃতির বিরুদ্ধে সমানে সমানে। বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত লড়াইয়ে প্রকৃতি নিশ্চয়ই ধিক্কার দেয় তার হেরে যাওয়া, অপুষ্ট সন্তনদের প্রতি। আর এই ধারণা আমাদের মাথা থেকে কবে বের হবে? ত্রাণ নামের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে কেউ কারও মাথা কিনে নিচ্ছে না। এটা বন্যাকবলিতদের অধিকার। এঁরাও পরোক্ষ ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছেন।

যাই হোক, বন্যার জন্য যথেষ্ট প্রস্তুতি কি আমাদের ছিল, থাকে? আমার মনে হয় না। বন্যার বিরুদ্ধে যেটা করা প্রয়োজন ছিল, সেটা হচ্ছে পুরোদস্তর যুদ্ধ। এই যুদ্ধে আমি চোখ বন্ধ করে চাইতাম সেনাবাহিনীকে, সশস্ত্রবাহিনীকে। জানি-জানি, অনেকে চোখ সরু করে তাকাচ্ছেন। কেন যেন আমাদের একটা বদ্ধমূল ধারণা হয়ে গেছে যুদ্ধ ব্যতীত সেনাবাহিনী ব্যারাকের বাইরে থাকতে পারবে না। প্রাণ গেলে যাক, তাতে কী! এ তো স্রেফ ক্ষমতার অপচয়! এমন ভাবনাটা কেন, যেন এরা অন্য গ্রহের কেউ! যেন এদের কারো সঙ্গে আমাদের কারো প্রাণের সম্পর্ক নাই।

অন্যরূপও আছে। সেনাবাহিনীর লোকজনরা কতটা সচেষ্ট এটাও ভাবার বিষয়। থাইল্যান্ডে সম্প্রতী সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, হাসিমুখে থাকার জন্য, কারণ সহজেই অনুমেয়।

কে মাথার দিব্যি দিয়েছে, মানুষের বিরুদ্ধেই কেবল যুদ্ধ হয়, মানুষের জন্য অকল্যাণকর কিছুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বারণ! বাস্তবতা হচ্ছে, বন্যাকে, বন্যার্তদেরকে মোকাবেলা করার জন্য যে ট্রেনিং প্রয়োজন এটা সিভিলিয়ানদের নাই।

একজন ফোন করে আমার কাছে দোয়া চাইলেন। কারণটা জানতে চাইলে তিনি বললেন, ভাইরে, ত্রাণ দিতে যাইতাছি। এই মানুষটাকে ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি। আল্লার কসম, একে সামলাতে ৪ জন লাগবে।এই মানুষটার পাজারোর এসি খারাপ ছিল বলে মাত্র ৬০ মাইল আসতে আসতেই প্রাণ বেরিয়ে যায় এমন অবস্থা। তো, এই বান... নাকি ত্রাণ দেবে। শারীরিক ফিটনেসটা কেন জরুরী এটা বলার অবকাশ নেই!

এই যে ক্রিকেট টীম কমান্ডো ট্রেনিং নিচ্ছে, এতে কি লাভ এ নিয়ে মাথা ঘামাতে ঘামাতে বুদ্ধিজীবী ভায়াদের টিকে থাকা অল্প চুল যায় যায় প্রায়। ক্ষতিটা কী হে বাপু? আজ মজার একটা জিনিস নোটিশ করলাম, ক্রিকেটারদের কমান্ডো ট্রেনিং চলাকালীন সময়ে নিউজ কাভার করতে গেছেন বিভিন্ন পত্রিকার ৩৭ জন সাংবাদিক। এদের যখন বলা হল, ‘চাইলে আপনারাও ট্রেনিং নেয়ার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। তাতে ক্রিকেটাররাও সঙ্গ পাবেন’। ইস্ট্রাকটরের এই আহ্বানে ৩৭ জন সাংবাদিকের কেউ, আমাদের সোনার সন্তানেরা, মহতী সাংবাদিক ভাইয়েরা মোটেও আগ্রহ দেখালেন না। অন্তত চেষ্টা করা, এই ভাবনাটাও এদের মাথায় খেলা করেছিল কী!

আসলে নাগরিক আমরা, বড্ডো নাগরিক হয়ে গেছি। ফাস্ট ফুড খাওয়া স্টমাক আর ফ্ল্যাটের এক চিলতে জানালা দিয়ে বিশাল আকাশ দেখা, এসি রুমে বসে বসে কলমবাজী করার বাইরে খুব একটা নড়াচড়া করতে আমাদের ভাল লাগে না। তারচে বড় কথা হচ্ছে, আমাদের কেবল প্রয়োজন চড়া দামে বিক্রি করার মত তথ্য- আমরা একেকজন চলমান তথ্যবাজ! এর বাইরে ভাবার অবকাশ কই! আমরা এটা কখনই বুঝতে চাইব না, আমরা বুঝতে চাই না, একজন দুর্ধর্ষ তথ্যবাজ আর একজন মানবিক মানুষের অনেক তফাত!

ওয়েল, বলছিলাম, মিশন পসিবলের কথা। মিশন পসিবল, প্রকৃতির বিরুদ্ধে প্রকৃতির সাহসী সন্তানদের যুদ্ধ। ন্যূনতম প্রতিরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সাপোর্ট রেখে ব্যবহার করা হবে সশস্ত্রবাহিনী এবং তাদের সব ধরনের লজিস্টিক, অত্যাধুনিক ইক্যুপমেন্ট, সমস্ত হেলিকপ্টার, স্পীড বোট। নখদর্পনে থাকবে এই দেশের প্রতি ইঞ্চির ম্যাপ। প্রয়োজনে মাউসের এক ক্লিকেই যেন জানা যেতে পারে বন্যা উপদ্রুত এলাকার আপডেট; ঠিক কোন ধরনের সহায়তা প্রয়োজন। ধরা যাক, সাপের কামড়ের প্রতিষেধক, এটা যে এক্ষণ বড়ো প্রয়োজন। একটা টিম এটা চাওয়া মাত্রই হেলিকপ্টার উড়ে গিয়ে দিয়ে আসবে।
সশস্ত্রবাহিনীর পাশাপশি, যে সমস্ত মোল্লারা গাট্টি-বোঁচকা নিয়ে ধর্মপ্রচার করেন এদের অংশগ্রহন করানো যেতে পারে। বন্যায় যেখানে সৃষ্টির সেরা জীব নরকযন্ত্রণা ভোগ করছে সেখানে ধর্মপ্রচার আপাতত কিছুদিনের জন্য মুলতবি রাখলে ১টা আসমান ছিটকে পড়বে না নিশ্চয়ই! এমনিতে সিভিলিয়ানরা, যারা এই মিশনে অংশগ্রহন করবেন, অংশগ্রহনে এদের পযাপ্ত র্ট্রেনিং, অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে দুর্দান্ত কাজে আসবে।

আগে থেকেই ফান্ড আলাদা করে রাখা হবে। কোত্থেকে ফান্ড আসবে? আইডিয়া চাইলে সে দেয়া যাবে নে। এমনিতে প্রত্যেকবার ফান্ড উঠানো শুরু হয় বন্যা শুরু হবার পর, রয়েসয়ে। এটা পরবর্তীতে ঠিক কতটা কাজে লাগে আমার জানা নাই- অন্তত মৃত মানুষের কোন কাজে লাগে বলে তো মনে হয় না!

মিশন পসিবলের যুদ্ধ শুরুর আগে মস্তিষ্কে একটামাত্র তথ্যই কেবল ঘুরপাক খাবে, একজনকেও মরতে দেয়া যাবে না; একজনকেও না। বাই এনি চান্স, কেউ মারা গেলে এটা হবে ওই এলাকার দায়িত্বে থাকা পুরা টিমের ব্যর্থতা। সামরিক কায়দায় বাজবে বিউগল, ধর্মীয় কায়দায় হবে মানুষটার দাফন, মানবিক কায়দায় ওই টিমের সমস্ত লোকজনরা মাথা নীচু করে রাখবেন খানিকক্ষণ- এটা যে তাদের ব্যর্থতা!

মিশন পসিবল। একটি স্বপ্নের নাম। আফসোস, আমাদের দেশে স্বপ্নবাজদের বড়ো অভাব। আর আমরা নিজেরা তো স্বপ্ন দেখাই ভুলে গছি...”।

*এই পোস্টে খানিকটা সংশোধনী হবে। প্রায় হুবহু এই লেখাটা অন্য একটা ওয়েব-সাইটে দেয়ার পর মাহবুব সুমন খানিকটা ভুল ধরিয়ে দেন। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা।
তিনি লেখেন: "আমাদের তথাকথিত মেধাবী সেনাবাহিনীরতো ডিজাস্টার ম্যানেজম্যান্ট এর কোনো রকম ট্রেনিং নাই। ...
তবে দুর্যোগে আমাদের পূর্ব প্রস্তুতি থাকে না এটা মনে হয় পুরুপুরি ঠিক না।"
আমার বক্তব্য ছিল: "ভাল একটা পয়েন্ট বলেছেন। আমি খানিকটা শুধরে নিচ্ছি। ধন্যবাদ আপনাকে।
ঠিক বলেছেন এদের ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট-এর ট্রেনিং নাই।
আমি মনে করি, একজন মানুষকে কত দ্রুত মেরে ফেলা যায় এই ট্রেনিং-এর চেয়ে, একজন মানুষকে কত দ্রুত বাঁচানো যায় এই ট্রেনিং সহজ। এদের শিখতে সময় লাগার কথা না।
শিখবে।

ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট কেন জরুরী এর উদাহরণ দেয়া যায়। আমেরিকার মত দেশ, সব আছের দেশ। অথচ ক্যাটরিনা যখন আঘাত করল তখন নিউ অর্লিন্সে মানুষ চিকিৎসার অপ্রতুলতায় অসহায়ভাবে মরছিল। তখন পাশের বন্দরে uss bataan জাহাজটি ছিল। যে জাহাজে ছিল ৬টি অপারেটিং রুম এবং ৬০০ হসপিটাল বেড। কিন্তু ওই জাহাজকে কোন কাজেই লাগানো হয়নি। এই জাহাজের ১২০০ নাবিক বসে বসে মশা মারছিল। এটাও ডিজাষ্টার ম্যানেজমেন্ট না-থাকার কুফল।

এদের এখানে প্রকৃতিক বিপর্যয় হয় কালেভদ্রে কিন্তু আমাদের তো নিয়ম করে। অন্তত মিনিমাম প্রস্তুতি যদি আমাদের না থাকে তাহলে বেদনার শ্বাস ফেলে বলতেই হয়, আমাদের প্রাণ, কেজি দরের প্রাণ!

এমনিতে এও সত্য, আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর মহাশয়গণ তো আবার গরম মেজাজের লোক। ত্রানের সঙ্গে ফাউ বেত পেলে ওই ত্রান পিষ্টকখন্ড মনে হবে। এখানে উল্লেখ করা যায় থাই সেনাবাহিনীকে একবার বলা হয়েছিল, হাসিমুখে থাকার জন্য। যেন জনগণ তাদের সঙ্গে একাত্ম বোধ করে। আইডিয়া খারাপ না।

এমনিতে আমাদের সেনাবাহিনী আবার বিচিত্র কারণে বৈদেশে জাতিসংঘ মিশনে অতুলনীয় কাজ দেখান। সিয়েরো লিওন-এর জনগণ তো আমাদের সেনাসদস্যদের কর্মকান্ডে মুগ্ধ হয়ে দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় ভাষা হিসাবে বাংলাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।
আল্লা জানে, নিজেদের দেশের জনগণ দেখলে কেন এদের মিজাজ খারাপ হয়।
..............
লিখেছিলাম, প্রস্তুতি থাকে না। এটা আক্ষরিক অর্থে গ্রহন করার প্রয়োজন নাই।
যেটুকু থাকে তাকে প্রস্তুতি বলা চলে না। গত বন্যা বা এর আগে ঠিক মনে নাই। ওই সময় ওর-স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট। অনেক জায়গায় একেকটা স্যালাইন ২০-২৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছিল। স্যালাইনের অভাবে ছোট-ছোট বাচ্চা মারা যাচ্ছিল।
এই নিয়ে গা করা অবকাশ আমাদের কই! ওষুধ কোম্পানীগুলো, এর সঙ্গে জড়িত লোকজনের সেকি আনন্দ! ‘ইশকুল খুইলাছে মাওলা’ টাইপের- হরিলুট শুরু হয়ে গিয়েছিল। সরকারী অধিকাংশ হাসপাতালে স্যালাইন ছিল না। সরকারকে এটা কী আমার মত অগাবগার বলে দিতে হবে, বন্যার পর স্যালাইনের চাহিদা বেড়ে যায়?

কেবল সরকারকেই দোষ দেই না। আমরা আম-পাবলিকও কম যাই না। এমনিতে প্রতি শ্বাসে আল্লার নাম নিতে নিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলি। কিন্তু বন্যা বা প্রাকৃতিক দুর্য়োগের পর চিড়া, গুড়ে, স্যালাইনের দাম কেন বেড়ে যায়, এটা কার কাছে জানতে চাইব?
বিচিত্র দেশ! জিনিসপত্রের দাম লাগামছাড়া হয় রমজান মাসে-সিয়ামের মাসে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ চালাচালি হয় রমজান মাসে।
এসবে আমাদের কোন বিকার নাই।
বড় ধর্মভীরু আমরা। এমনিতে পান থেকে চুন খসলেই ধর্ম গেল রে বলে রব উঠে- আকাশলোকের বাসিন্দার পর্যন্ত ঘুম ভেঙ্গে যায়।

সশস্ত্রবাহিনীর কথা আলাদা করে উল্লেখ করেছিলাম। এই কারণে না যে, এদের প্রতি আমি বিশেষ মমতায় মাখামাখি হয়ে আছি। এদের ট্রেনিং-এর অনেক কিছুই এখানে কাজে লাগবে বিধায়।
পৃথিবীর অনেক দেশে বেসামরিক লোকজন বিভিন্ন মেয়াদে সামরিক ট্রেনিং নেয়। কেউ কাজে, কেউ শখ করে। পরবর্তীতে এই ট্রেনিং বিভিন্ন কাজে লাগে। দেশের জন্য, তার নিজের জন্য।
আমাদের দেশেও এটা চালু করা গেলে মন্দ হয় না। ফাঁকতালে সশস্ত্রবাহিনীর বাড়তি আয় হবে। তবে সমস্যাও আছে। টাকার জন্য হয়তো আমার মত সাধারণরা বাদ পড়ব। কিন্তু ঠিকই গালকাটা রমজান, পেটকাটা রব্বান ট্রেনিং নিয়ে ভজকট করে ফেলবে- আগে যে ভুলভাল করত, এখন আর করবে না! কী মোলায়েম করে গাল কাটা যায়, পেট কাটা যায় এটা রপ্ত করে ফেলবে। কে জানে, হয়তো বা অজান্তেই আমাদের মুখ দিয়ে বেরিয়ে যাবে, ভাইয়ের হাতে যাদু আছে।

মুশকিল হচ্ছে, সশস্ত্রবাহিনীর লোকজনরা ব্যারাক থেকে বের হওয়ামাত্রই নিজেদের মত অন্যদেরকে বানাবার ফিকির খোঁজে। আমার চুল ছোট তো সবার চুল ছোট থাকবে। আমার চেহারা রোবটের মত তো সবার চেহারা রোবটের মত থাকবে। ফুল-শ্লীভ শার্টের হাতা গুটিয়ে রেখেছে কে রে? বান…, ব্যাটন দেখছো, এইটা তোমার…।
কই, আমরা ব্লাডি সিভিলিয়ানরা তো তাদের কাছে জানতে চাই না, তুমি কেন হুবহু আমাদের মত না?

এরা যখন হেলমেট না থাকার অপরাধে প্রকাশ্যে, স্ত্রীর সামনে তার স্বামীকে কান ধরে উঠবস করায় তখন একটা সভ্যতা মৃত্যু হয়। এই ট্রেনিংটা এদের কে দেবে?
এরা ট্রেনিং-এর এই অংশটা পুরাপুরি বিস্মৃত হয়। সামান্য একজন সৈনিকের সঙ্গে তার বউ থাকলে এবং ওই সৈনিকের সাথে জেনারেলের দেখা হলেও সে স্যালুট করবে না, জাস্ট সালাম দেবে। এটা করা হয়েছে স্ত্রীর কাছে তার সৈনিক স্বামীর সম্মানার্থে।

আফসোস, এরা এটা বিস্মৃত হয়, এদের বাবা-মা, ভাই-বোন সামরিক না, বেসামরিক লোক। এরা চুল বড় রাখতে পারে, এরাও বন্যায় ভেসে যেতে পারে, ঝড়ে উড়ে যেতে পারে, লঞ্চ ডুবে মরতে পারে!"

ছবিঋণ: প্রথম আলো

No comments: